দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি

দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি? তা জেনে নিতে চাইলে নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো আপনাকে মনোযোগের সাথে পড়তে হবে। দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি? সেই বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। চলুন তাহলে দেখে নেই, দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি? 
ইসলামের দৃষ্টিতে দান-সদকা করা সাওয়াবের কাজ। দান-সদকা করলে বিপদ আপদ কেটে যায় এবং আরও বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়। দান সদকা করলে সাধারণত যে সকল উপকার পাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। তো আসুন দেখে নেয়া যাক, দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি?

দান করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, "তোমরা যদি প্রকাশ্যে সাদকা দাও, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম" (সূরা আল বাকারা:২৭১)

দান সদকার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা:) বলেন, "খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর।" (বুখারি ও মুসলিম)। যাইহোক নিচে দান সদকা করার গুরুত্ব ও ফজিলত সমূহ লিস্ট আকারে তুলে ধরা হলো। 
  • দান-সদকা করলে অসুস্থতা দূর হয়।  (তিরমিজি শরিফ)
  • সদকার মাধ্যমে বিপদ দূর হয়। (তিরমিজি শরিফ)
  • দান করলে পরকালে এর প্রতিদান পাওয়া যায়। (আল হাদিস)
  • দান করলে গুনাহ মাফ হয়। ( ইবনে মাজাহ )
  • সদকার মাধ্যমে জান্নাতের দরজা খুলে যায়।( সূরা জুমার )

অভাবের দিনে দান করার ফজিলত

অভাবের দিনে দান করার ফজিলত অত্যধিক। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এমন অবস্থায় দান করবে যে, তুমি (শারীরিকভাবে) সুস্থ, ধন-সম্পদের প্রতি লোভ আছে, অভাব-অনটনকে ভয় করছো এবং ধন-সম্পদের আশাও পোষণ করছো। (ওই অবস্থায় এ আশংকায়) তুমি দান করার ব্যাপারে এমন কার্পণ্য করো না যে, শেষে মৃত্যুর সময় এসে যায়। আর তখন তুমি এটা ঘোষণা কর যে, এ পরিমাণ অমুকের এবং সে পরিমাণ অমুকের। অথচ অমুকের জন্য সে মাল আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। (বুখারি ও মুসলিম)
অভাব অনটনের সময় দান করলে আরো যে সকল ফজিলত রয়েছে সেগুলো নিচে লিস্ট আকারে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। আসুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, অভাবের দিনে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 
  • অভাবের দিনে সদকা করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। ( সূরা আল বাকারা ২৬১)
  • অভাবের দিনে সদকা করলে আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়। (আল হাদিস) 
  • অভাবের দিনে দানকারী কেয়ামতের দিন বিশেষ পুরষ্কারে ভূষিত হবে। (আল হাদিস) 
  • অভাবের দিনে দান জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়। (আল হাদিস) 
  • অভাবের দিনের দান জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে। ( সহিহ আল বুখারী) 

ইসলামে দান করার ফজিলত

দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি? আশা করি সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। কেননা দান করার ফজিলত সম্পর্কে ইতিমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। নিচে ইসলামে দান করার ফজিলত সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য তুলে ধরা হবে। তাই আসুন দেখে নেয়া যাক, ইসলামে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। 

ইসলামে দান করার ফজিলত অনেকে বেশি। মহান আল্লাহ তা'আলা দান করার ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, "যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন"। (বাকারার ২৬১)

এছাড়াও দানের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য অগণিত হাদিস রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়। (মুসনাদে আহমদ)। আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে; আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন। এরপর তিনি তা লালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে। এমনকি একসময় সে (সামান্য খেজুর পরিমাণ) সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।"(বুখারি ও মুসলিম) 

আল্লাহর রাস্তায় দান সদকা করলে অগণিত ও অসংখ্য ছাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। দান করলে আপনি যে সকল উপকার পাবেন। সেগুলো নিচে লিস্ট আকারে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। ইসলামে দান করার ফজিলত সমুহ নিম্নরূপ। 
  • দানকারী কেয়ামতের দিন আরশের নিচে ছায়া পাবে। (তিরমিজি শরিফ) 
  • সদকা করলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। (সূরা আল ইমরান )
  • দান করলে দোয়া কবুল হয়।
  • সদকার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর হয়। ( বুখারী)
  • সদকা হারাম থেকে রক্ষা করে। (মিশকাত)

রমজান মাসে গোপনে দান করার ফজিলত

দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি? আশা করি তা জেনেছেন। আপনি যদি দান সদকা করার ফজিলত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চান তাহলে নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন।  দান গোপনে এবং প্রকাশ্যে উভয়ভাবেই করা যায়। তাই আপনি প্রকাশ্যেও দান করতে পারেন গোপনেও দান করতে পারেন। 

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক ভালো।  (সুরা আল বাকারা: ২৭১)
গোপনে দান করার ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না।" (বুখারি, মুসলিম)
  • সুন্নত অনুসরণ করার সওয়াব পাবেন। (নাসাঈ)
  • রমজান মাসে দান করা মুমিন বান্দার কাজ। ( সুরা ইয়াসিন ৪৭ )
  • আর রহমান নামক জান্নাত লাভ করতে পারবেন। ( তিরমিজি )
  • জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবেন। ( বুখারী)
  • অন্যান্য মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাবেন। ( আল হাদিস )

অসহায়দের দান করার ফজিলত

দান-সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত কি, ইতোমধ্যেই সেই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে অসহায়দের দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে। অসহায় ব্যক্তিদেরকে দান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আপনি যদি অসহায় ব্যক্তিকে দান করেন তাহলে অধিক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রেশমি কাপড় পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের পবিত্র শরাব পান করাবেন।" (সুনানে আবি দাউদ)।
এছাড়াও অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রেশমি কাপড় পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের পবিত্র শরাব পান করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ)"। ১৬৪১৩

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url